pratilipi-logo প্রতিলিপি
বাংলা

প্রতিলিপির লেখকদের আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতার কাহিনী - পর্ব ৪

04 জুন 2023

নমস্কার,

প্রতিলিপিতে বহু লেখক অনেক বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। তাঁরা লেখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের একটি পরিচিতি তৈরি করেছেন। আপনি কি জানেন এই লেখকদের প্রথম লেখা, লেখা থেকে উপার্জন, লেখার ধরন, লেখালেখি নিয়ে স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ লেখকদের জন্য তাঁদের বার্তা ইত্যাদি সম্পর্কে কী ধরনের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে? আসুন তবে আজ থেকে জেনে নেওয়া যাক! আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিলিপির লেখকদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা আমরা আপনার সাথে শেয়ার করব!


"... জীবনের ইঁদুরদৌড়ে ছুটতে ছুটতে আবার যে সেই পুরোনো ডাইরিকে খুঁজে পাবো, তা কোনদিন আশা করিনি। কলেজে ওঠার পর প্রথম স্মার্টফোন হাতে পাই। তারপর কোনো এক সাইড থেকে প্রতিলিপির একটা গল্পের লিংক থেকে প্রথম প্রতিলিপির খোঁজ পাওয়া। যদিও প্রথমে ভাবিনি , এখানে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। সাধারণ পাঠক হিসেবে পড়তে শুরু করলেও, মনের মধ্যে সেই লেখক ভাবনাটা চাপা পরে যায়নি। ডাইরির পাতা আবার ভরাট করতে শুরু করলাম ।কিন্তু তখনও এতটা সাহস জোগাড় করতে পারিনি যে প্রতিলিপিতে পোস্ট করবো। একজন খুব কাছের মানুষের সমর্থনে সেই ভয়টাও কেটে গেছিল। তবে প্রথম গল্প পোস্ট করার সময় অবশ্যই কিছু কথা মনে হয়েছিল-----

১) আদৌ আমার গল্পটা কেউ পড়বে?
২) তাদের সেটা ভালো লাগবে তো?
৩) যদি কারোর খারাপ লাগে!!?
এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটা কথা মনে হয়েছিল, তুমি ততক্ষন অবধি কোনো উত্তরেই স্থির হতে পারবে না, যতক্ষণ না অবধি তুমি সেটা জিজ্ঞাসা করছো। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে গেলে, আমাকে গল্পটা পোস্ট করতেই হতো।

সেই ক্লাস 9 এ প্রথম কাচা হাতে লেখা গল্পটাই পোস্ট করেছিলাম। "শুভ অষ্টমী" - যেটা আমার জীবনে লেখা প্রথম গল্প ও প্রতিলিপিতে পোস্ট করা প্রথম গল্প। এখনো মনে আছে আমার প্রথম গল্পে প্রথম দিন 50 জন পাঠক ছিল আর রিভিউ 1টি ( যে আমারই পরিচিত)। তবে সেই 50 জন পাঠকই ছিল আমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর। তার সাথে আমার সাহসও বাড়িয়েছিল। তারপরের দিন আমি এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব দিই। আর প্রথম বার রেটিং পেয়েছিলাম 2 টো, তাও 5 স্টার। যেটা আমার বাকি 2 টো প্রশ্নের উত্তরও খুব সহজে দিয়ে দিয়েছিল। তারপর ক্রমে পাঠক, রেটিং ও রিভিউ সবই বাড়তে থাকে আর আমার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। যেটা আমি কোনোদিনও ভাবিনি সবার সামনে আনতে পারবো।প্রতিলিপি আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে। যেটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। শুধু এটা নয়, তার সাথে আরো অনেক কিছু দিয়েছে প্রতিলিপি।..."

আরও পড়ুন - লেখার কাহিনী (তুলিকা সাঁতরা) 


"... তারপর একদিন হঠাৎই মনে হল যদি আমিও লিখতাম, প্রকাশ করেছিলাম একটা ছোটো গল্প। কিন্তু নতুন ছিলাম বলে তেমন কেউই গল্পটা পড়েনি, কিছুটা মন খারাপ নিয়েই প্রতিলিপি আনইন্সটল করে দিলাম ফোন থেকে। এরপর আবার শুরু হলো জীবনের এক নতুন অধ্যায় কলেজে উঠলাম সবকিছু নতুন নতুন লাগছিল। বেশ কিছু মাস পর খুব মনে পড়ে যে গল্পটা প্রকাশ করেছিলাম সেটা কি কেউ পড়েছে সেটা দেখতেই কৌতুহল নিয়ে চলে এলাম প্রতিলিপিতে দেখলাম গল্পটা প্রায় ৫০০ জন মত মানুষ গল্পটা পড়েছে। ১০০ জন মানুষ আমাকে অনুসরণ করেছে এটা দেখার পর ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। উৎসাহ জেগেছিল কিছু কিছু মানুষ কমেন্ট করেছিলো। তাদের কমেন্ট দেখে মনে জোর পেলাম। তারপর শুরু করেছিলাম নিজের প্রথম ধারাবাহিক গল্প যার নাম অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ।

এরপর আর থেমে থাকিনি লিখে গিয়েছি একটার পর একটা গল্প। তবে সেটা অবশ্যই আপনাদের ভালোবাসার কারণে। সত্যি কথা বলতে এরপর প্রতিলিপিতে গল্প যেন একদিন না লিখলেই মন খারাপ হয়ে যেত সেই কারণে অবশ্য প্রচুর বকা খেয়েছি তারপর তো ২০২০ তে লকডাউন পড়ে যায়। ওই এক বছর সময় বাড়িতে বসে পুরোপুরি গল্প লেখাতে নিজেকে ঢেলে দিয়েছিলাম। আমার মা ছোটো থেকে আমাকে সবকিছুতে সাপোর্ট করে তাই এই ক্ষেত্রেও মায়ের সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু বাবা না জানি কি মনে করতো তাই সারাদিন ফোন নিয়ে থাকলে অসন্তুষ্ট হত। তবে আমি ভাবতেও পারিনি সেই দিন বেশি দূরে নেই যেদিন বাবাও খুশি হবে।

প্রতিলিপি থেকে যেদিন প্রথম গল্প গুলো নিয়ে এগ্রিমেন্ট করার জন্য বলা হয় নিজেকে সত্যি সেদিন আবার লেখক মনে হয়েছিল। দশ হাজার‌
ফলোয়ারের জন্য বাঁধাই করা অ্যাওয়ার্ড দেখে যখন আজ আশেপাশের মানুষ যখন জিজ্ঞাসা করে, তুই লেখালেখি করিস প্রতিলিপিতে? বাহ্ খুব ভালো এভাবেই চালিয়ে যা। শুনতে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগে। আমার অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে শুধু প্রতিলিপির কারণে। আর হ্যাঁ অবশ্যই আপনাদের জন্য আপনারা সেই প্রথম দিন থেকে আমার পাশে আছেন আমি জানি ভবিষ্যতেও থাকবেন।..." 

আরও পড়ুন - আমার গল্প (প্রিয়াঙ্কা মুখার্জী)


"... ভরা লকডাউনে সবাই যখন ঘরবন্দী তখন প্রতিলিপি আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে লেখার এবং বহু পাঠকের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার। সেই সময়টা আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় হিসেবে কেটেছে। এই লেখালেখির জগতটাকে কাছ থেকে দেখেছি, পাঠকদের ভালোবাসা কতটা তীব্র তা উপভোগ করেছি। নিজেকে নতুন ভাবে চিনেছি।
এরপর ধীরে ধীরে লকডাউনের প্রথম পর্ব কাটলো, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলো তবে লেখালেখি থামলো না। এ যে নেশার মতো, এত সহজ নাকি থামানো!! চলল গাড়ি গড়গড়িয়ে, এলো এক নতুন পর্ব। প্রতিলিপি যোগাযোগ করলো আমার সঙ্গে সরাসরি, গল্পের জন্য কন্ট্র্যাক্ট সাইন হলো। সাতদিনের মধ্যে পেলাম একটা বড় অঙ্কের টাকা। আমার জীবনের প্রথম উপার্জন। মাস তিনেকের মধ্যেই আবার একটা কন্ট্র্যাক্ট সাইন করলাম তাতে টাকার অঙ্কটা আরো বেশি। সেই সময় জায়গা বিশেষে লকডাউন চলছে। ভাইয়ের ফোন হঠাৎ খারাপ হয়ে গেছে। ফোনটা খুব দরকার, নয়তো অনলাইন ক্লাসগুলো করা যাবে না। ছুটলাম বন্ধুকে নিয়ে ব্যাঙ্কে, টাকা তুলবো নিজের আ্যকাউন্ট থেকে।
ব্যাঙ্কের একজন বয়ষ্কা ভদ্রলোক আমার আ্যকাউন্ট চেক করে প্রশ্ন করলেন, "কি করো? মুখটা দেখি"।
মাস্কের চাপা সরাতেই ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকে বললেন, "স্টুডেন্ট তো?"
ঘাড়টি নেড়ে বললাম, "ফিফথ সেমিস্টার"।
"কাজ কি করো?" পরের প্রশ্ন এলো।
বেজায় হাসি পেলেও তা আড়াল করে বললাম, "ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের রাইটার"।
কিছু আর বললেন না তিনি। টাকা গুনে হাতে দিয়ে বললেন, "অনেক বড় হবে, অল দা বেস্ট"।
মুহুর্তে চোখ দুটো ভিজে এসেছিল আমার। মুখে হাসি ধরে রেখে বেরিয়ে এসেছিলাম ব্যাঙ্ক থেকে। নিজের উপার্জনে প্রথম ফোন কিনে দিই ভাইকে।..."

আরও পড়ুন - আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি (Mysterious Girl 'মিশু')


আজ তাহলে এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে ফিরে আসব প্রতিলিপি পরিবারের আরও কয়েকজন লেখকের অভিজ্ঞতার কাহিনী নিয়ে। 

সঙ্গে থাকবেন! 

টিম প্রতিলিপি