pratilipi-logo প্রতিলিপি
বাংলা

প্রতিলিপির লেখকদের আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতার কাহিনী - পর্ব ৫

06 जून 2023

নমস্কার,

প্রতিলিপিতে বহু লেখক অনেক বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। তাঁরা লেখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের একটি পরিচিতি তৈরি করেছেন। আপনি কি জানেন এই লেখকদের প্রথম লেখা, লেখা থেকে উপার্জন, লেখার ধরন, লেখালেখি নিয়ে স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ লেখকদের জন্য তাঁদের বার্তা ইত্যাদি সম্পর্কে কী ধরনের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে? আসুন তবে আজ থেকে জেনে নেওয়া যাক! আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিলিপির লেখকদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা আমরা আপনার সাথে শেয়ার করব!


"... কাজের অবসরে গল্প পড়তে পড়তে ২০১৯ কেটে গিয়ে এলো ২০২০। এই বছরটাকে একটা অভিশপ্তময় বছর বললেও বোধয় খুব ভুল বলা হবে না। কারণ এই বছরের প্রথম দু মাস কাটতে না কাটতেই করোনার প্রকোপে সারা বিশ্বব্যাপী লক ডাউন ঘোষিত হয়েছিল। ফলে অনেক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো না জানি কিভাবে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করছিলেন। যেহেতু বেসরকারি যায়গায় কাজ করতাম সেহেতু আমার অফিসটাও বন্ধ হয়ে গেলো। খুব একঘেঁয়ে লাগছিলো দিনগুলো।

অবসর যেনো আর কাটতেই চাইছিলো না। সময় কাটাতে প্রতিলিপিই তখন একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠলো আমার। আসলে আমি মানুষটা একটু ইন্ট্রোভার্ট। তাই কোনো কালেই বিশেষ বন্ধু বা বন্ধুমহল বলে আলাদা কিছু ছিলনা। আর অন্যান্য সকল অ্যাপের থেকে আমি ইউটিউব আর প্রতিলিপিতেই বেশি সময় কাটাতাম। একটা সময় পর গিয়ে আর যেনো কিছুই ভালো লাগছিলো না। একমাস হতে যাচ্ছিল অফিস বন্ধ। কত গান শুনবো আর কতই বা গল্প পড়বো? বিরক্ত লাগছিলো একপ্রকার।

তারিখটা ছিল ২৪শে এপ্রিল ২০২০। ঠিক করলাম আমিও আজ থেকে প্রতিলিপিতে লিখবো। কারণ ইতিমধ্যেই গল্প পড়ে প্রচুর কাল্পনিক কথোপকথন আর চরিত্ররা মাথার মধ্যে এসে ভিড় করতে শুরু করেছিল। তাই খুব বেশি না ভেবে একটু দুরু দুরু বুকে প্লে স্টোর থেকে অফিসের ফোনেই প্রতিলিপি অ্যাপটা ইন্সটল করলাম। অফিসের ফোন বুঝতেই পারছেন ব্যাক্তিগত মেইল আইডির অ্যাকসেস সেখানে নেই। তাই আমি ফেসবুক আইডি থেকে লগইন করেছিলাম। এবার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড মনে থাকলে আপনি যে কোনো ফোন থেকেই সেটায় লগইন করতে পারেন। তাই ঘটনাচক্রে আর ভগবানের আশীর্বাদে আমার লগইনটা সফল হয়েছিল।

এরপর সেদিনই লিখে ফেলেছিলাম "সূচনা এবং ইতি"র প্রথম পর্ব। যা কিনা বাস্তব আর কিছুটা কল্পনার উপর অধারিত একটা তেরো মিনিটের ছোটগল্প। না কোনো ভিউজ আসেনি সেদিন। পাঠক সংখ্যা, গড় রেটিং, সর্বমোট অনুসরণকারী আর সর্বমোট পর্যালোচনা সবকটা সেগমেন্টই সেদিন শূন্য ছিল। পরপর চারটে দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও গল্পটায় কোনো ভিউজ আসেনি। সত্যি কথা বলতে একটু হতাশ হয়েছিলাম। এমনটা নয় যে আমি জনপ্রিয় হওয়ার জন্য প্রতিলিপিতে লিখতে এসেছিলাম কিন্তু একটা কথাতো মানবেন উৎসাহ না পেলে কোনোকিছুই হয়তো সম্ভব নয়।..." 

আরও পড়ুন - প্রতিলিপি ও আমি (তপতী কর্মকার 'মেঘা')


"... প্রতিলিপিতে পড়া আমার প্রথম ধারাবাহিক ছিল আশীষ জোয়ারদার স্যারের 'পায়েল একটি অসমাপ্ত কাহিনী'। এক প্রকার নেশা ধরানোর মতো অসামান্য একটি কাহিনী! যে গল্পের প্রতিটি পর্ব আমাকে পাগল করে দিয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন গল্প ,উপন্যাস ,ধারাবাহিক ,কবিতা পড়তে পড়তে আমার মনের সুপ্ত ইচ্ছেটা জেগে ওঠে। বলতে গেলে আমি আগে কোনোদিনই সেভাবে লেখালেখি করিনি। তবে প্রতিলিপিতে এসে সবার লেখা দেখে দেখে আমারও ইচ্ছে হলো মনের সুপ্ত কল্পনাগুলোকে অক্ষরের রূপ দিই। সেই থেকে ভয়ে ভয়ে আমি একটি অনুগল্প প্রতিলিপিতে  প্রকাশ করে ফেলি। গল্পটি ছিল 'পেখম: একটি প্রতিবাদী মেয়ের কাহিনী'।গল্পটি প্রকাশ করার পরেই ধীরে ধীরে ভিউজ বাড়তে শুরু করে, অনুসরণকারীও বাড়তে শুরু করে।শুরুতে এতো মানুষের সাপোর্ট হয়তো পাইনি। তবে ধীরে ধীরেই তা বাড়তে শুরু করে।আর এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমি প্রথম উপন্যাস ' পরিনতি' লিখতে সাহস পাই। তবে পরিচিতি টা আরোও বাড়তে থাকে আমার খুব পছন্দের উপন্যাস ' জব উই মেট' লেখার পর। উপন্যাসটি লেখার পর আমি প্রচুর মানুষের যেমন ভালোবাসা পেয়েছি তেমন নেগেটিভ কমেন্টও এসেছে অনেক। প্রথম প্রথম খুব ভেঙে পড়তাম নেগেটিভ কমেন্ট পেয়ে। কিন্তু অন্যান্য প্রিয় লেখক লেখিকার সাপোর্ট, ভালোবাসা পেয়ে আমি নেগেটিভিটি সরিয়ে রেখে পরবর্তী ধারাবাহিক লেখার প্রস্তুতি নিই। আর এর পরের ধারাবাহিকটাই আমাকে আরোও পাঠক পাঠিকার কাছে পৌঁছে দিয়েছে।ধারাবাহিকটি ছিলো ' ডেয়ারডেভিল সুইটহার্ট' । ধারাবাহিকের পুরো গল্পই ছিলো আমার নিজস্ব মেস জীবনের কাহিনী। মেসে থাকাকালীন আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে কিসব মজার ঘটনা ঘটিয়ে ছিলাম সেই নিয়েই একটি দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের কাহিনী।তাছাড়া এই ধারাবাহিকে বিভিন্ন মজার ঘটনাগুলো যুক্ত করতে ও ধারাবাহিকটিকে পুরোপুরিভাবে সাজাতে আমার বোন মধুশ্রী জানা ভীষণভাবে সাহায্য করেছিল।তাছাড়া বিভিন্ন গল্পের বিভিন্ন প্লট সাজাতেও সে খুব সাহায্য করে।এই জন্য বোনের কাছে আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ।
এই ধারাবাহিকের পরেই আমার লেখার ইচ্ছেটা আরোও বেড়ে যায় আর লেখা নিয়ে ভবিষ্যতে এগোনোর ইচ্ছেও মনের মধ্যে জায়গা করে নেয়।

প্রতিলিপি থেকে আমার প্রথম মাসিক উপার্জন ছিলো 218 টাকা 61 পয়সা। টাকাটা সামান্য হলেও আমার কাছে বিষয়টা অসামান্য ছিল। নিজের লেখার মাধ্যমে প্রথম উপার্জনটা মনের মধ্যে যে এতটা খুশি বয়ে নিয়ে আসবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।পরের দিকে অবশ্য টাকার অঙ্কটা ধীরে ধীরে বেড়েছিলো।পাঠকরা স্টিকার দিয়ে সাপোর্ট করলে বা সাবস্ক্রাইব করলে সেখান থেকেও একটা অঙ্ক যুক্ত হয় মাসিক আ্যমাউন্ট এর সাথে।..." 

আরও পড়ুন - ভালোবাসার প্রতিলিপি (তনুশ্রী জানা)


"... প্রতিলিপির সাথে আমার পরিচয় ২০১৭ র থেকে ।জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমেই এই অনলাইন স্টোরি রিডিং অ্যান্ড রাইটিং অ্যাপের খোঁজ পাই আমি । তবে খোঁজ পেলেও , দীর্ঘ তিনটি বছর শুধু একনিষ্ঠ পাঠিকা হয়েই ছিলাম আমি ।ঐ সময়টাতে কত লেখক, লেখিকার , কত গল্প যে আমি পড়েছি , তার কোনো হিসেব এখন আমার কাছে নেই ।তবে তখনো নিজে থেকে কিছু লেখার মত সাহস ভেতরে তৈরী হয়নি । শেষে একটা সময় এমন আসলো যে আমার এই গল্প পড়া , আমার জীবন সাথীর কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠলো !.

অবশ্য তাকেও দোষ দিই না । বৌ যদি সারাক্ষন মোবাইলের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে থাকে , তবে বরের কাছে অবশ্যই চিন্তার বিষয় । একদিন তাই না পেরে বলে , " দিন রাত অন্যের গল্প পড়ে পড়ে চোখ খারাপ না করে নিজে তো দুই চার লাইন লিখলেও পারো ।

কথাটা মন্দ লাগলো না । ' নিজে থেকে তো দুই কলম লেখাই যায় ' ... বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী বলে কথা !

কিন্তু ওই যে ভয় , কে কি বলবে ?. কার কেমন লাগবে ?..  ঐ ভয়েতে কাবু হয়েই কেটে গেলো অনেকটা সময় । শেষে একসময় ভয় কাটলো । কাটলো সঙ্কোচ ।

সময়টা ২০২০ র  জানুয়ারি মাসের প্রথম দিক । করোনা তখনো চিনের গন্ডী পেরিয়ে বিশ্ব মহামারির তকমা হাসিল করেনি । সবে সবে তার থাবা চিন থেকে বেরিয়ে অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় রয়েছে । ঠিক সেই সময়টায় নিজের দ্বিধা কাটিয়ে উঠে লেখা শুরু করলাম । প্রথম গল্প 'মিঠি' ভৌতিক গল্প হলেও তাতে সামাজিক মূল্যবোধের একটা দিক তুলে ধরলাম । প্রথম পর্ব পাবলিশ করে দিলাম ভয়ে ভয়ে । ঠিক করলাম পাঠক রিভিউয়ের ওপর নির্ভর করে লিখবো । যদি ভালো বলে , তবেই আগে এগোবো নতুবা নয়।

ঈশ্বরের করুনায় একে একে বহু পাঠক পড়লেন । কমেন্ট করলেন ,বললেন ' আরো পর্ব দিন  ,পড়তে চাই !'

কি যে ভালো লাগলো ,ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না । মনে হলো , আমার লেখাও লোকে পড়ছে , আবার বলছে আরো পড়তে চাই !!..

ব্যাস এরপর আর থামিনি । একের পর এক পর্ব লিখে গেলাম । সাথে শুরু হলো প্রেম , সাসপেন্স থ্রিলার ধর্মী ' এ কেমন প্রেম' । সেই গল্প কেও সমান ভাবে সমাদর পেতে দেখলাম ।

এরপর আসলো একটা ঝড় , যার নাম " প্রতাপগড়ের বৌরাণী " !!.." 

আরও পড়ুন - প্রতিলিপি... এক স্বপ্ন (রত্না হালদার)


"...আর একটা কথা না বললেই নয়! সেটা হল আমাদের সকলের প্রিয় এই প্রতিলিপি। আমার জীবনে তিনজনের অবদান অপরিসীম। 'জন' এই কারণেই বললাম, প্রতিলিপি আমার কাছে শুধু পড়া বা লেখার অ্যাপ নয়, আমার স্বপ্ন পূরণ করার বড় একটা জায়গা। আমার স্বপ্নসঙ্গী।

হ্যাঁ ছোটোবেলা থেকে টাকা পয়সার অভাব খুব একটা বুঝতে পারিনি। যখন যা চেয়েছিলাম; পেয়েছি। কিন্তু মনে একটা দুঃখ থেকে গিয়েছিল আমি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করার পরেও বেকার! আমি কোন রোজগার করি না! আমার জন্মদাত্রী মাকে পূজার সময় একটা শাড়ি কিনে দেব, তাও অন্যের পয়সায়!

প্রতিলিপিতে যখন প্রিমিয়াম আর সাবস্ক্রিপশনের ব্যাপারটা শুরু হয়; তখন প্রথম দিকে আমি এর ঘোরতর বিরোধী ছিলাম। তারপর যখন ব্যাপারটা বুঝলাম তখন আর বিরোধিতা করিনি। প্রতিলিপি তো কাউকেই পড়া থেকে বঞ্চিত করছে না! একদিন পর কিংবা পাঁচদিন পর পর্ব তো খুলেই যাচ্ছে। তখন সকলেই বিনামূল্যে পড়তে পারে। এর মধ্যে কেউ যদি টাকা দিয়ে পড়তে চায় ক্ষতি কি! আমাদের মতো গৃহবধূ লেখকদেরও তো ইচ্ছা করে নিজের রোজগারের পয়সাতে আপনজনদের কিছু কিনে দিই। এই দেওয়ার মধ্যে কী যে আনন্দ সত্যিই এতদিন সেটা বুঝিনি! প্রতিলিপি আমাকে সেই আনন্দটা দিয়েছে। তাই প্রতিলিপিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের বাংলা সাহিত্য প্রতিলিপির মাধ্যমে আরও এগিয়ে যাক।..."

আরও পড়ুন - পরিচয় (চম্পা চক্রবর্তী)


আমাদের লেখক পরিবারের কয়েকজনের কথা আপনার কাছে তুলে ধরলাম। ভবিষ্যতে আরও কাহিনী যুক্ত হবে। সঙ্গে থাকবেন! 

টিম প্রতিলিপি