pratilipi-logo প্রতিলিপি
বাংলা

প্রতিলিপির লেখকদের আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতার কাহিনী - পর্ব ১

25 মে 2023

নমস্কার,

প্রতিলিপিতে বহু লেখক অনেক বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। তাঁরা লেখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের একটি পরিচিতি তৈরি করেছেন। আপনি কি জানেন এই লেখকদের প্রথম লেখা, লেখা থেকে উপার্জন, লেখার ধরন, লেখালেখি নিয়ে স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ লেখকদের জন্য তাঁদের বার্তা ইত্যাদি সম্পর্কে কী ধরনের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে? আসুন তবে আজ থেকে জেনে নেওয়া যাক! আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিলিপির লেখকদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা আমরা আপনার সাথে শেয়ার করব!


 "তখন সময়টা দুই হাজার উনিশের শেষের দিক। ভারতে তখনো করোনা থাবা বিস্তার না করলেও পৃথিবী জুড়ে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। সেই পরিস্থিতিতে ভাবলাম এবার অন্ধকার থেকে বের হতে হবে, অন্তত মনের শান্তিটা ভীষণভাবে দরকার। আর সেই শান্তি একমাত্র দিতে পারে লেখালেখি। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছে, লেখালেখির সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ নেই। আদৌ লিখতে পারবো কিনা সেটাই জানি না। তবে লিখতে আমাকে হবেই, অন্তত আমার ভালো থাকার জন্য। এই কারণেই বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপগুলোর সন্ধান করতে লাগলাম, যেখানে আমি খুব সহজেই লেখা জমা দিতে পারব। লেখালেখি বিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপে ঘুরতে ঘুরতে দুই হাজার কুড়ির একেবারে প্রথম দিকে সন্ধান পেলাম "প্রতিলিপি"-র।


পরীক্ষামূলকভাবে কিভাবে লেখা প্রকাশিত হয় জানার জন্য প্রথমেই প্রকাশ করলাম গোয়েন্দা বেদ ইমনের প্রথম সিরিজ "শান্তিনীড়ে শান্তি শেষ"। কিন্তু প্রায় তিন ঘন্টা সময় জুড়ে বিস্তৃত এই বড় গল্পটির সময় সীমা অনেকটাই বেশি। পাঠক হিসাবে একসঙ্গে এতবড় গল্প পড়তে হলে আমার নিজেরও ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে। তাই মোটামুটি তখন তিনশোর মতো ভিউস হওয়া সত্ত্বেও লেখাটি তুলে নিয়েছিলাম।

তখন এখানে 'ধারাবাহিক' শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হলাম। সেই অর্থে প্রতিলিপিতে আমার লেখা প্রথম উপন্যাস "নীল প্রেম কালো গোলাপ"। উপন্যাসটি যখন শেষ হয় তখন ভিউস মোটামুটি তিরিশ হাজার মতো ছিল। জানি সংখ্যাটা বেশি নয়, কিন্তু সেই সময় আমার খুব ভালো লেগেছিল আর তার থেকেও বেশি ভালো লেগেছিল পাঠকের থেকে সরাসরি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিক্রিয়া পেয়ে। আগেও যেহেতু আমার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত, তাই লেখা প্রকাশটা আমার কাছে নতুন না হলেও সরাসরি পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানা আমার কাছে নতুন ছিল এবং একই সঙ্গে ভীষণভাবে শিক্ষনীয়। আজ তিন বছর এখানে থাকার পরেও যেটা এখনো এক‌ইভাবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে কত কিছু শিখিয়ে চলেছে।..."

আরও পড়ুন - প্যাশন (সুষমা মণ্ডল) 


"প্রথম এন্ড্রয়েড ফোন হাতে পেয়ে খোঁজ শুরু করলাম, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিভাবে লেখা যায়। নানাভাবে অনুসন্ধান করে পেলাম প্রতিলিপি বাংলা। সম্ভবতঃ দুহাজার সতেরো সাল নাগাদ আমি প্রতিলিপি এপ্লিকেশন খুঁজে পাই প্লেস্টোরে।

নিয়ম অনুযায়ী লগিন করেই আমি অবাক হয়েছিলাম। কারণ, আমার অনেক আগেই এই এপ্লিকেশনের সাথে অনেক লেখক-লেখিকা যুক্ত এবং তাঁরা নিজেদের লেখা প্রকাশ করছেন। এত আনন্দ হয়েছিল যে মনে হচ্ছিল আমি কোনো প্রতিযোগিতা জিতেগেছি। উল্লাস ব্যক্ত করেছিলাম "ইয়েস,,,, ইয়েস,,,, ইয়েস" বলে।

শুরু করলাম অনেকের লেখা পড়া। অনেকেই সুন্দর সুন্দর গল্প ও কবিতা লিখতেন। ছন্দে ভরা কবিতা আমায় খুব আকৃষ্ট করতো। আবার কারুর গল্প পড়ে কল্পজগতে হারিয়ে যেতাম। অনেক লেখায় ছন্দ কাটলে নিজের মতো করে মত বিনিময় করতাম। প্রায় ছয়মাস অন্যের লেখা পড়ে সাহস পেলাম আমিও লিখতে পারি। আমার এন্ড্রয়েড ফোনে বাংলা কীবোর্ড ছিল না। তাই অফিসে বসে  ছুটির পর যে কম্পিউটারে কেউ কাজে থাকতো না সেই কম্পিউটারে ডাইরিতে যে লেখা ছিল সেগুলোই ছাপানো শুরু করলাম প্রতিলিপির পাতায়। এই ছিল আমার ডিজিটাল লেখার জগতে প্রবেশ পথ ও লেখালেখি শুরু।

তখন কবিতা লিখতাম। প্রথম কবিতা পোস্ট করে, সারাদিন পেজ রিফ্রেশ করে দেখি একজন মাত্র পড়েছেন। আমার লেখা একজন পড়লো! সে আনন্দ ধরে রাখা অসম্ভব। মানে মনের মধ্যে এমন একটা কল্পনা হচ্ছিল যে, বিখ্যাত কবিদের লেখা যেমন পাঠকেরা পড়ে আমার লেখাও তেমনি পড়বে? সাতদিনে তিনজন পাঠক পেয়েছিলাম। হতাশ হইনি। মোবাইলে লিখতাম বাংলা লেখা ইংরেজী হরফে। সাত দিন পর আবার একটা লেখা পোস্ট করলাম।

দ্বিতীয় লেখাটা পোস্ট করার ঘন্টা চারেকের মধ্যে প্রথম রিভিউ পেয়েছিলাম "অপূর্ব।" এই রিভিউটা পাওয়ার পর মনের মধ্যে যেন খুশির জোয়ার এসেছিল। আমার পরিচিতদের মধ্যে যাঁরা গল্প, কবিতা বা উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের দেখিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, "দেখো, আমার লেখাও মানুষ পড়ে এবং মন্তব্য করে।" তখন আমাকে সবাই উৎসাহ দিয়েছিল। সবাই একটাই কথা বলেছিল, আমার কলমে ও ভাবনায় কাব্যিক একটা ভাব রয়েছে। আমি লেখা চালিয়ে যেতে পারি এবং নিশ্চয়ই সফল হব। সকলের আশীর্বাদকে পাথেয় করে প্রতিলিপির পাতায় লেখা ছাপতে থাকলাম।..." 

আরও পড়ুন - ভাবনায় প্রতিলিপি (কলমের বন্ধু)


"--- ততদিনে আমি ডিজিটাল লেখালেখির দুনিয়ায় সামান্য সড়গড় হয়ে উঠেছি। ২০১৮-এর জানুয়ারির শুরু থেকে ২০১৯-এর জানুয়ারির শুরু অবধি, এই একটা বছরে আমি ফেসবুকে ও নিজের পেজে ছাড়াও, আরো কয়েকটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত লিখছি। একটু-আধটু পরিচিতি তৈরি হচ্ছে, পাঠক-সংখ্যা বাড়ছে, আর আমার সাহস সঞ্চয় হচ্ছে। তখন দেশ-বিদেশ মিলিয়ে কয়েকটি ডিজিটাল বাংলা ম্যাগাজিন থেকে লেখার আমন্ত্রণ পাচ্ছি-- আরো লিখতে চাই এরকম একটা তূরীয় মুডে আছি। ২০১৯-এর জানুয়ারির সেইরকম এক কনকনে সকালে, আমার ভগ্নীসমা বন্ধু দেবযানী দত্ত আমাকে একটা লিঙ্ক পাঠাল হোয়াটসঅ্যাপে। তখন আর কোনো কথা হয়নি।

একটু বেলা বাড়লে বসলাম হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে। দেবযানীর পাঠানো লিঙ্কটা খুলতেই বেরিয়ে এল "প্রতিলিপি বাংলা ফেসবুক" পেজের একটা পোস্ট। তাতে রয়েছে দেবযানী দত্তর একটা লেখা। প্রতিলিপির নিয়ম অনুযায়ী ফেসবুক পেজে প্রোমোট করা হয়েছে। গল্পটা পড়তে গিয়ে ঢুকে পড়লাম "প্রতিলিপি অ্যাপে"। বিশাল কৌতূহল তৈরি হল মনে। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে ফোন করলাম দেবযানীকে-- দেবযানী, এখানে কী ভাবে জয়েন করতে হয়? যে কেউ জয়েন করতে পারে?

দেবযানী খুব অবাক হল-- আমি অত জায়গায় লিখি, কিন্তু "প্রতিলিপি" সম্পর্কে কিছুই জানি না দেখে। এরপর ও মোটামুটি অভিভাবিকার মতো বুঝিয়ে দিল "প্রতিলিপি" সম্পর্কে। তারপর খুব হতাশ গলায় বলেছিল-- সংঘমিত্রাদি, আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না যে তুমি "প্রতিলিপি" সম্পর্কে কিছুই জানতে না।

ব্যাস্, ওইদিনই সন্ধ্যায় গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করলাম প্রতিলিপি অ্যাপ। তারপর বানিয়ে ফেললাম অ্যাকাউন্ট এবং পোস্ট করে দিলাম নিজের লেখা। প্রথম পোস্ট একটি অণুগল্প-- নাম: নবু। খুব ভয়ে ভয়ে ও টেনশন বুকে নিয়েই "প্রতিলিপি"র সঙ্গে নিঃশব্দে পরিচয় ঘটে গেল। সেদিন রাত্রে শুতে যাবার আগে এগারোটা নাগাদ-- দুরুদুরু বুকে খুললাম প্রতিলিপি অ্যাকাউন্ট।..."

আরও পড়ুন - সাফল্যের নাম 'প্রতিলিপি (সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী)


'প্রতিলিপি' নামটা আমার কাছে প্রচন্ড ভালোবাসার। যখন আমি এখানে লিখতাম না তখনও আমার নামটা খুব ভালো লাগতো। এই নামটার মধ্যেই যেনো সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় আমার কাছে। প্রতিলিপি একটা অ্যাপ্লিকেশন এটা জেনেছিলাম ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ। কী করে জেনেছিলাম প্রশ্নটা মস্তিষ্কে প্রকট হচ্ছে তাই না? বলছি, বলছি। আমার বাবার মোবাইলে প্রথম প্রতিলিপির ফেসবুক পেজ দেখেছিলাম। আজ্ঞে, আমার বাবা জানেন যে মেয়ে তার গল্প পড়তে ভীষন ভালোবাসে তাই একটা গা ছমছমে ভূতের গল্প ফেসবুকে দেখামাত্র আমাকে মোবাইলটা দিয়ে বলেছিলেন গল্পটা পড়ার জন্য। আমি প্রথম প্রতিলিপিকে চিনি সেই গল্পটা পড়ার মাধ্যমেই। হ্যাঁ, সেই গল্পটার নাম এমনকি লেখকের নামও আমার ঠিক মনে নেই কিন্তু আমার ভালো লেগেছিলো অনেক। কৌতূহলবশত আমি প্রতিলিপির ফেসবুক পেজে নিজের মোবাইল থেকে গিয়েছিলাম এবং বেশ অনেকগুলো গল্প দেখে পড়েও ছিলাম। তারপর এক বা দুদিনের মধ্যেই অ্যাপ্লিকেশনটা ইনস্টল করে নিই। প্রতিলিপি ইনস্টল করি জুন মাসে কিন্তু 'গল্প কী দেবো?', 'গল্প দেওয়া কী ঠিক হবে?', 'আমার এই লেখনী কী কারো আদৌ ভালো লাগবে?' এরকম নানা প্রশ্নের চিন্তায় গল্প দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তারপর অনেকবার ভেবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে দিয়েই দেখি না, এমনিতেও তো কেউ পড়বেন না; তার থেকে ভালো একটা জায়গায় গল্পটা থাকুক। অতঃপর আমি ১৩ আগস্ট, ২০২০ সালে প্রথম 'অজানা বন্ধন' গল্পের একটা পর্ব আপলোড করি। আমি যে সময় প্রতিলিপিতে লেখালেখি শুরু করি তখন এখনকার মতো গোল্ডেন ব্যাজ, সাবস্ক্রিপশন এসব ছিলো না; কিন্তু তখন ছিলো 'লাইভ সিরিয়াল' নামক একটি অপশন। কি দুর্দান্তই না ছিলো সেটা! যেকোনো ধারাবাহিক সপ্তাহের ঠিক কবে কবে দেবো সেটা আগে থেকে সেখানে ফিক্সড করে রাখতে হতো। না শিডিউল করে নয়, শুধুমাত্র দিনগুলো ঠিক করে রাখতে হতো। আমি সপ্তাহে দু'দিন, তিন দিন এই হিসেবে গল্প দেওয়া শুরু করলাম। ইতিমধ্যে আমি অজানা বন্ধনের সাথে 'অর্ধাঙ্গিনী'ও দেওয়া শুরু করি; বলাবাহুল্য সেটাও সপ্তাহে কয়েকদিনই দিতাম।

প্রতিলিপিতে প্রতিবার পর্ব আপলোড করতাম, সবার লেখা দেখতাম তারপর আবার বেরিয়ে যেতাম অ্যাপ্লিকেশন থেকে। আমি তো জানতামই যে আমার লেখা কেউ পড়বেন না তাই আশাও ছিলো না। মূলত লেখালেখি আমার ভালোবাসা। নিজের মন থেকেই যা আসতো সেটাই লিখে প্রতিলিপিতে আপলোড করতাম কিন্তু পাঠকের আশা করিনি; তাও পর্ব আপলোড করলেই মন'টা খুশিতে ভরে উঠতো। প্রায় প্রথম কয়েক সপ্তাহ একদম পাঠক না থাকলেও ভগবানের কৃপায় একদিন হঠাৎ করে পাঠক সংখ্যা দেখতে পেলাম। আমার গল্প কেউ পড়েছেন সেটা দেখে আমার অনেক ভালো লাগলো; ঠিক কতোটা ভালো লেগেছিলো লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব ব্যাপার। আমি খুবই সাদামাটা জিনিস লিখি সেই লেখাও কারো পছন্দ হতে পারে সেটা অবিশ্বাস্য ছিলো যেনো আমার কাছে। আমি সর্বদা ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো এটার জন্য। এরপর আমি আরো বেশি আনন্দিত মনে পর্ব দেওয়া শুরু করি। আমার কেন জানি মনে হতো যে পাঠক হয়তো আশা করে বসে আছেন পর্বের জন্য।

'অজানা বন্ধন' ও 'অর্ধাঙ্গিনী' দুটো ধারাবাহিক দেওয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে একদিন একজন পাঠকের রিভিউ পেলাম। তার গল্পটা ভালো লেগেছিলো সেটাই তিনি মন্তব্যের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। একটা লাইন আমার কাছে সেদিন একশো লাইনের সমান ছিলো; আমি এতোটাই খুশি হয়েছিলাম।..."

আরও পড়ুন - আকাশপরীর ডায়রি (অঙ্কিতা চ্যাটার্জী)


আজ তাহলে এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে ফিরে আসব প্রতিলিপি পরিবারের আরও কয়েকজন লেখকের অভিজ্ঞতার কাহিনী নিয়ে। 

সঙ্গে থাকবেন! 

টিম প্রতিলিপি